পবিত্র বলতে বোঝায় বিশুদ্ধ বা খাঁটি। এই কথার দ্বারা নিষ্পাপ বা পাপহীন এবং নির্মল অবস্থাকেও বোঝায়। ঈশ্বরপুত্র যীশু খ্রীষ্ট পবিত্র মণ্ডলী স্থাপন করার জন্য পৃথিবীতে এসেছেন। কারণ পিতা সকল মানুষকে পবিত্রতার পথে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছিলেন। ঈশ্বর মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি মানুষকে তাঁরই মতো পবিত্র করে সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু মানুষ পাপ দ্বারা সেই প্রতিমূর্তি অর্থাৎ তাঁর দেওয়া পবিত্রতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই ঈশ্বর তাঁকে আবার সেই প্রতিমূর্তি অর্থাৎ পবিত্রতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছেন। । পুত্র এসে জীবন দিয়ে পবিত্রতা ফিরিয়ে এনেছেন। এই কাজটি জগতের শেষ দিন পর্যন্ত যেন চলতে থাকে সেজন্যে তিনি একটি মণ্ডলী স্থাপন করেছেন। এই কারণে খ্রীষ্টমণ্ডলী পবিত্র। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজেই পবিত্র। তাঁর দ্বারা স্থাপিত মন্ডলীও পবিত্র। তিনি মণ্ডলীকে পবিত্র আত্মার দানে ভূষিত করেছেন। মন্ডলীকে তাঁর বধুরূপে ও তাঁর দেহরূপে তুলনা করে তাঁর পবিত্রতা দান করেছেন। তাঁদেরকে আপন করে নিয়েছেন। ভ্রাতৃপ্রেম হচ্ছে পবিত্রতার প্রাণস্বরূপ যা অর্জন করার জন্য আমরা সবাই আহ্বান পেয়েছি। এই ভ্রাতৃপ্রেম মন্ডলীকে পবিত্রতার পথে পরিচালিত করে, অর্থপূর্ণ করে এবং পূর্ণতা দান করে।
আমাদের এই পৃথিবীটা একটা জমির মতো। এখানে ভালো ফসলের গাছ ও পাশাপাশি আগাছা রয়েছে। আমাদের নিশ্চয় মনে আছে যীশুর বলা সেই গমের দানা ও শ্যামাঘাসের উপমা কাহিনিটি। ঐ গল্পটিতে যীশু বলেছেন, এক জমির মালিক জমিতে গমের বীজ বুনেছেন। কিন্তু রাতের অন্ধকারে শত্রুপক্ষ সেই একই জমিতে শ্যামাঘাস অর্থাৎ আগাছার বীজ বুনে দিয়েছে। গমের গাছ ও শ্যামাঘাস দেখতে প্রায় একই রকম। তাই একই সাথে তারা বাড়তে লাগল। কিন্তু পার্থক্য বোঝা গেল যখন তা পূর্ণভাবে বড়ো হলো, ঠিক ফসল ফলাবার আগে। মালিকের কর্মচারীরা আগে শ্যামাঘাস তুলে ফেলতে চাইল। কিন্তু জমির মালিক তাতে রাজি হননি। কারণ তার ভয় ছিল, যদি শ্যামাঘাস তুলতে গিয়ে তারা গমের গাছ তুলে ফেলে। তাই তিনি দুইটাকেই এক সাথে বাড়তে দিলেন।
এর মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু বুঝিয়েছিলেন মালিক হলেন স্বয়ং ঈশ্বর, গম হলো ভালো লোক, শ্যামাঘাস হলো মন্দ লোক, জমি হলো এই পৃথিবী, শত্রুপক্ষ হলো শয়তান। এই পৃথিবীতে ভালো ও মন্দ লোকের সহ-অবস্থান। ঈশ্বর পাপীর ধ্বংস চান না। বরং তিনি চান পাপী মন পরিবর্তন করে তাঁর পথে ফিরে আসুক। তাই তিনি অপেক্ষা করেন, সময়-সুযোগ দান করেন।
দেখা যায় এই জগতে অনেকেই পবিত্রভাবে জীবন যাপন করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেই আহ্বানে পূর্ণভাবে সাড়া দান করেন। মণ্ডলী তাদের স্বীকৃতি দান করার মাধ্যমে সাধু-সাধ্বীর মর্যাদা দান করেন। খ্রীষ্ট আমাদের সেই একই আহ্বান জানান যেন আমরা তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকেও পবিত্র করে তুলতে পারি।
কাজ: পবিত্র থাকার অর্থ এবং কীভাবে পবিত্র থাকা যায় তা জোড়ায় জোড়ায় আলোচনা ও উপস্থাপন করো। |